শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা
- আপলোড সময় : ১৬-১১-২০২৫ ০৮:২৩:২৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-১১-২০২৫ ০৮:২৩:২৫ পূর্বাহ্ন
শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে নানাবিধ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১৫৫টি গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসা ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসাসেবায় সংকট ও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে রোগীদের ক্ষোভ বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. ইকবাল হাসান যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্বে শিথিল হয়ে পড়েছেন। দিনে কোনোভাবে সেবা চললেও রাতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন মূলত মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টরা। ফলে গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে দ্রুত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল বা সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রোগী রেফার করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, দিনের বেলা ডাক্তারা হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিলেও বিশেষ করে রাতের বেলায় ডাক্তারের পরিবর্তে চিকিৎসা দিচ্ছেন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টরা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ইকবাল হাসান নিয়মিত এর তদারকি না করায় দিন দিন হাসাপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে দিনে-রাতে জরুরি বিভাগে গুরুতর কোনো রোগী আসলে ডাক্তার ও মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টরা পূর্ণাঙ্গ সেবা না দিয়ে দায়সারাভাবে সেবা দিয়ে দ্রুত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল না হয় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে স্থানান্তর করছেন। ফলে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
জানাযায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ইকবাল হাসান মাসের অধিকাংশ সময়ে নিজ অফিসে অবস্থান না করে খাতা-কলমে ঠিক রেখে নিজ জেলা মৌলভী বাজার ও সিলেট শহরে অবস্থান করেন। কেউ খোঁজতে গেলে দেখা যায়, উনার অফিসের দরজা খোলা, ফ্যান ও এসি চলছে। কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, “স্যার বাহিরে আছেন, মাঠে আছেন।” এভাবেই দিনকে দিন দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ রয়েছে ডা. ইকবাল হাসানের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ও জয়কলস ইউনিয়নে থেকে আগত দুই বৃদ্ধ মহিলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় অসহায় ও নিঃস্ব হতদরিদ্র রোগীদেরকে উপজেলা সমাজসেবার অধীনে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে আর্থিক সহায়তা ও ঔষধ বিনামূল্যে প্রদানের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ইকবাল হাসানকে সুপারিশ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার রোগী কল্যাণ ফান্ডে টাকা নেই এবং নানা অজুহাতে রোগীদেরকে ফিরিয়ে দেন। এছাড়া অন্যান্য রোগীদেরও এভাবে ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের একঘেয়েমির কারণে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সরকারি রোগী কল্যাণ ফান্ডের অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার হতদরিদ্র রোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর মেয়ে জানান, আমার মায়ের বয়স ৭০ বছর। আমার মাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে অনেক টাকার ঔষধ লাগবে বলে ডাক্তার জানান। তখন হাসপাতালের বড় স্যারের কাছে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে ঔষধ দেয়ার কথা বলি। তখন বড় ডাক্তার স্যার আমাদের কোন সহযোগিতা করেননি। রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে কোন ঔষধ দেওয়া দেয়া যাবে না, কোন ফান্ড নাই বলে তিনি জানান। পরে আমার অসুস্থ মাকে বাঁচাতে উপজেলা সমাজসেবা ম্যাডামের কাছে নিয়ে যাই। তিনি আমার মাকে দেখে ২ হাজার টাকার ঔষধ ফার্মেসির মাধ্যমে দেন। আমার কোন ভাই নাই। আমরা দুই বোন আর মা আমাদের পরিবারে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ষাটোর্ধ্ব এক নারী জানান, আমি হাসপাতালে গেলে আমাকে তারা ভর্তি হতে বলেন। আমি তাদের কথা মতো হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে ডা. ইকবাল স্যার বলেন, আমরা যে ফার্মেসির অধীনে ঔষধ দেই, এমাস থেকে তাকে বাদ দেয়া হবে। ১০/১২ দিন পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে আমরা ঔষধের ব্যবস্থা করে দেব। পরে আর দেন নাই।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোছা. তাছলিমা আক্তার লিমা বলেন, রোগী কল্যাণ সমিতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সুপারিশ ক্রমে আমরা রোগীকে যাতায়াত ভাড়া, ঔষধের মূল্যসহ নানা সহায়তা দিয়ে থাকি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ইকবাল হাসান অভিযোগের বিষয়ে বলেন, উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রোগী কল্যাণ ফান্ডের অর্থায়নে যে ফার্মেসির অধীনে ঔষধ বিতরণ করা হতো, সেই ফার্মেসির সাথে আমাদের কন্ট্রাক্ট বন্ধ রয়েছে। ১/২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন ফার্মেসিকে দায়িত্ব দিলে পুনরায় বিতরণ করা হবে। রাতে ডাক্তাররা ডিউটি না করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, যারা ডিউটি করেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন শরীফি বলেন, সমাজসেবার অধীনে রোগীদের জন্য যে ভাতা চালু আছে, সেগুলো পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নিয়মের ভিতরে থাকলে সেটা না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। যে দু’জন রোগী অভিযোগের কথা বলেছেন তারা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেন, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নেব। এছাড়া চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ নেব। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি